শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরোধীতা-এটি কেমন রুচি?

উখিয়া উপজেলাধীন রত্নাপালং ও হলদিয়াপালং ইউনিয়নের হাকিম আলী মাতবরপাড়া, সরদার পাড়া, তেলী পাড়া, কালার পাড়া, আবছার বাপের পাড়া, ঘাটি পাড়া, দক্ষিণ হলদিয়া ও দক্ষিণ নলবনিয়া এলাকাগুলি পরস্পর পাশাপাশি এলাকা। লোক সংখ্যা অনেক।

ঐ এলাকার প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠা তেলীপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৭০ইং সালে প্রতিষ্ঠিত। ঐ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে এত বিশাল এলাকায় এস.এস.সি পর্যন্ত লেখাপড়া করা লোক ছিল ৪ জন। নাম দস্তখত জানা লোক ছিল অনধিক ১৫ জন। বাকী সবাই ছিল নিরক্ষর। তেলী পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর এলাকাবাসী শিক্ষামুখী হয়। ছেলে মেয়েকে বিদ্যালয়ে পাঠায়।

বর্তমানে ঐ এলাকা সমূহে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে অশিক্ষিত কেহ নেই বললেই চলে। অনেক অশিক্ষিত দিন মজুরের ছেলে মেয়ে ও দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী আছে। তাদের সিংহভাগই সরকারী, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরীরত আছে। সকলের জীবনমানেরও উন্নতি ঘটেছে। সুতরাং তেলীপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি উরোক্ত এলাকা সমূহের শিক্ষা বিস্তারের এবং জীবনমান উন্নয়নের আলোক বর্তিকা।

বর্তমান বিদ্যালয় ভবনটি তিনতলা বিশিষ্ট দালান। ছাত্র-ছাত্রী বৃদ্ধির কারণে আরও একটি ভবন আবশ্যক। এতবিশাল এলাকায় একটিও উচ্চ বিদ্যালয় নেই। ফলে এই এলাকার উচ্চ শিক্ষার হার আশানুরূপ বাড়ছে না। সরকার জনবহুল এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে উচ্চ বিদ্যালয়ে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তেলীপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি জনবহুল এলাকার বিদ্যালয় হওয়ায়, একটিও উচ্চ বিদ্যালয় প্রকল্পের আওতাভুক্ত হবার যোগ্য। তজ্জন্যও উক্ত বিদ্যালয়ে আর একটি ভবন দরকার। কিন্তু বর্তমান বিদ্যালয় ভবনের সামনে ১৫ ফুট প্রস্থের উঠান ছাড়া আর জায়গা নেই। ফলে বিদ্যালয়ের জন্য বারংবার ভবন মঞ্জুর হলেও জায়গার অভাবে মঞ্জুর হওয়া ভবন নির্মাণ করা যায়নি।

বিদ্যালয়ের এরূপ দুরবস্থার বিষয়টি স্থানীয় বাসিন্দা খোরশেদ আলম এডভোকেট এর দৃষ্টিগোচর হওয়ায় তিনি উক্ত বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিদ্যালয় ভবন হতে ৫০ গজ দূরে নিজস্ব ৫০(পঞ্চাশ) শতক জমির উপর নিজ অর্থায়নে একটি খেলার মাঠ প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি উক্ত বিদ্যালয়কে আর একটি ভবনের জায়গা দেওয়ার উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন।

তিনি বিদ্যালয় পরিদর্শন করে দেখেন যে, বিদ্যালয় ভবনের উত্তর, পশ্চিম ও পূর্ব ৩ দিকে লোকজনের বাড়ি ঘর আছে। তাই উক্ত ৩ দিক হতে কোন জায়গা সংস্থান করা যাচ্ছে না। বর্তমান বিদ্যালয় ভবনের সামনে ১৫ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট উঠান আছে। ঐ উঠানের লাগোয়া ২০ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট চলাচলের রাস্তা আছে। ঐ রাস্তার বিদ্যালয় সংলগ্ন অংশের জন্য একটি বিকল্প রাস্তা নির্মাণ করে দিয়ে রাস্তার বিদ্যালয় সংলগ্ন ২০ ফুট বিশিষ্ট জমিটি বিদ্যালয়ের দখলে দিলে, বিদ্যালয়ের ১৫ ফুটের উঠান ও ২০ ফুটের রাস্তার সমন্বয়ে বিদ্যালয়টি ৩৫ ফুট প্রস্থ ১৪০ ফুট দৈর্ঘ্যরে একটি খালি জমি পাবে। যাতে আরেকটি ভবন করা যাবে। এই ভেবে জনাব খোরশেদ আলম এডভোকেট এলাকাবাসীর মতামত নিয়ে নিজ অর্থে বিকল্প রাস্তার জমি কিনেছেন এবং সে জমির উপর ২০০ দুইশত ফুট দীর্ঘ ও ২০ (বিশ) ফুট প্রস্থ বিকল্প রাস্তা নির্মাণ সম্পন্ন করেছেন।

উক্ত গ্রাম্য রাস্তার কার্পেটিং কার্যক্রম শুরু হওয়ায় উক্ত বিদ্যালয়ের স্বার্থে উক্ত রাস্তার বিদ্যালয় সংলগ্ন অংশের পরিবর্তে বিকল্প রাস্তাটি কার্পেটিং করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেছেন। বিকল্প রাস্তার জন্য জমি ক্রয়ে ও তাতে বিকল্প রাস্তা নির্মাণে তাঁর প্রায় ৪ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গেছে।

দুঃখের বিষয় হল যে, এলাকার সিংহভাগ লোকজন উক্ত কাজে সন্তুষ্ট হলেও গুটি কয়েক প্রতিহিংসা পরায়ন স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি নান রকম মিথ্যা অজুহাত সৃষ্টি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এরূপ উন্নয়ন উদ্যোগের বিরোধীতা শুরু করেছে। স্থানীয় কিছু প্রতিহিংসাপরায়ন রাজনীতিবিদ ও বিদ্যালয়ের বিরোধীয় যোগ দিয়েছেন। তারা কি এলাকার শিক্ষা সম্প্রসারণ থামিয়ে দিতে চায়। বিরোধীতাকারীদের ষড়যন্ত্রে যদি বিদ্যালয় সংলগ্ন রাস্তাটি কার্পেটিং হয়ে যায়, তা হলে বিদ্যালয়টি জীবনেও আরেকটি ভবনের জায়গা পাবে না। তাতে ক্ষতিগ্রস্থ হবে এলাকাবাসী এবং এলাকার শিক্ষা কার্যক্রম। তাঁদের অনেকেই জানে না যে, ‘ইতিহাস’ নামে একটি বিষয় আছে যা সবকিছুর নীরব সাক্ষী। তেরীপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সরকারী প্রতিষ্ঠান। এর স্থায়িত্বকাল আজীবন। এ বিদ্যালয়েরও একটি ইতিহাস আছে এবং থাকবে। বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে বিরোধীতাকারী কারা? এবং তারা ইতিহাসে কোন্্ স্থান পাবেন? অর্থাৎ কি ‘জনবান্ধব’ নাকি ‘গণশত্রু’ হবেন তা ইতিহাসই নির্ধারণ করবে। কারণ ইতিহাস কাকেও ভাড় দেয় না এবং ক্ষমা করে না। আশা করছি বিরোধীতাকারীদের শুভ বুদ্ধি উদয় হবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও এদিকে নজর দিবেন।

লেখক : এডভোকেট নুরুল হুদা ইমন।